নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রহমান জিকুর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে আবারো আলোচনার ঝড় উঠেছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের নামে অর্থ সংগ্রহ, নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা এবং দলীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
জেলা ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মীর অভিযোগ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঘোষিত হলেই জিকুর পকেট ভারী হওয়ার প্রবণতা শুরু হতো। আন্দোলনের নামে সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে সেই অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে নিহত ছাত্রদল নেতা নয়নের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ফেরার পথে জিকু কৌশলে দুই নেতাকর্মীকে আড়াইহাজারে তার এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার মুখে জিকু তাদের ফেলে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জিকু টানা দুই বছর সংগঠনের কার্যক্রমে কোনো ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হন। ইউনিট কমিটি গঠনে তার চরম ব্যর্থতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ সময় চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং লুটপাটের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের সময় জেলা যুবদল নেতা মশিউর রহমান রনির নেতৃত্বে ফতুল্লায় মাত্র ২০ সেকেন্ডের জন্য দেখা গেলেও তার পর থেকে জিকু কার্যত লাপাত্তা ছিলেন। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে নিজেকে বড় নেতা হিসেবে তুলে ধরতে চেষ্টারত জিকুর বিরুদ্ধে আড়াইহাজারে লুটপাট এবং দখলবাজির অভিযোগ রয়েছে।
কিছুদিন আগে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জে শোডাউন দিতে গেলে সেখানে ছাত্রদলের আরেক পক্ষের নেতাকর্মীরা তার মিছিলে হামলা চালায়। এ ঘটনায় কয়েক দফা ধস্তাধস্তির পর জিকু আবারও কর্মীদের ফেলে পালিয়ে যান।
এদিকে, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমনের সমর্থন পেয়ে জিকু জেলা ছাত্রদলে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাকে পুনরায় সভাপতি করার প্রচেষ্টা নিয়ে ফতুল্লা, সোনারগাঁও, আড়াইহাজার এবং রূপগঞ্জে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
২০২৩ সালে ইফতার পার্টির নামে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী নেতাদের কাছ থেকে এক থেকে দুই লাখ টাকা করে তুলে জিকু ও তার সহযোগীরা তা আত্মসাৎ করেন। পুলিশের বাধায় ইফতার পার্টি না হওয়ায় পুরো অর্থই তারা নিজেদের পকেটে রাখেন।
এর পাশাপাশি, ১০ ডিসেম্বর, ২৮ অক্টোবর, হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন আন্দোলনের সময় অর্থ সংগ্রহের নামে চাঁদাবাজি এবং কমিটি বানানোর ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে।
জেলা ছাত্রদলের ৯ সদস্যের কমিটির মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া সবাই আলাদা ব্যানারে কাজ করেছেন। ইউনিট কমিটি গঠনের সময় ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়েছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে জিকুর আতাঁতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাবুর লোকজনের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে মোটা অঙ্কের ভাগ জিকুর কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথাও জানা গেছে।
জেলা ছাত্রদলের বর্তমান নেতাকর্মীরা বিতর্কিত জিকুকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে যোগ্য নেতার হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, জিকুর মতো নেতার কারণে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন।
২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করলেও জিকু পুনরায় সভাপতির পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে জেলা ছাত্রদলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
জেলা ছাত্রদলের নেতৃত্ব সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা চান, যোগ্য ও দক্ষ নেতার মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী করা হোক।