ডেস্ক রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাইকারি কাঁচামালের আড়তের ব্যবসায়ী ও পরিচালকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গোলাকান্দাইল পাইকারি কাঁচাবাজারের বিসমিল্লাহ পাইকারি কাঁচামালের আড়তে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে আড়তের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আইয়ুব আলী বলেন, “এই আড়তের পরিচালক মজিবুর রহমান। ২০২১ সালে অনলাইন ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানের কাছ থেকে ১০ বছরের জন্য জমি ভাড়া নিয়ে আড়তটি স্থাপন করা হয়। বর্তমানে আমি আড়তের সার্বিক দেখাশোনা করছি।”
তিনি আরও বলেন, “যদিও চুক্তির মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত রয়েছে, তারপরও গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেলিম প্রধান আড়তটি নিজের দখলে নিতে চাচ্ছেন। তিনি ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন এবং বিভিন্নভাবে উচ্ছেদের চেষ্টা করছেন, যা আড়তের কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।”
এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার আড়তের দখলকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে, যেখানে অন্তত ৩০ জন আহত হন এবং ছয়জন গুলিবিদ্ধ হন। তবে এই সংঘর্ষের সঙ্গে আড়তের ব্যবসায়ীরা জড়িত নন বলে দাবি করেন আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, “স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা মিছিল করছিল, তখন সেলিম প্রধানের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। এখানে আড়তের কোনো বিষয় নেই।”
অন্যদিকে, সেলিম প্রধানের দাবি, তিনি যখন কারাগারে ছিলেন, তখন রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান ওরফে বালু হাবিব, আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর ভূঁইয়া এবং স্থানীয় সাংবাদিক নেতা মীর আব্দুল আলীম জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে তার ১৬ বিঘা জমি ভাড়া দিয়ে সেখানে আড়ত গড়ে তোলেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি তার জমি ফেরত চাইলে, তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাদের প্রভাব খাটিয়ে আড়ত দখলে রেখে দেন।
সেলিম প্রধান আরও বলেন, “গত বছরের ২৪ মে গোলাম দস্তগীর গাজীর অনুসারীরা আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে ও গুলি ছোড়ে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাবিবুর রহমান পালিয়ে যান, তবে তার ঘনিষ্ঠজনরা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে এখনো আড়তটি দখলে রেখেছেন।”
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইয়ুব আলী বলেন, “এই আড়তের সঙ্গে হাবিবুর রহমানের কোনো সম্পর্ক নেই। বৈধ চুক্তির ভিত্তিতে মজিবুর রহমানের সঙ্গে আড়ত পরিচালিত হচ্ছে, এবং সেলিম প্রধান চুক্তি অনুযায়ী নিয়মিত ভাড়া পাচ্ছেন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিনি জমির দখল চাইতে পারেন না, কারণ আমরা এই জায়গায় নিজেদের অর্থ ব্যয়ে উন্নয়ন কাজ করেছি। যদি তিনি জমি ফেরত পেতে চান, তবে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে হবে।”
এদিকে, সেলিম প্রধান আড়তের মালিকানা ফিরে পেতে আদালতে মামলা করেছেন এবং নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার ও স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর মধ্যেই তার বাড়িতে গুলি চালানো ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে তিনি থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।