বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা সতর্ক করে বলেছেন, শাপলা-শাহবাগ বিভাজন আবারও উসকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যা দেশের অগ্রগতির জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে।
তিনি বলেন, “আমরা কি ভুলে যাচ্ছি! পলাতক ফ্যাসিস্ট হাসিনা তাঁর ফ্যাসিবাদী শাসনের গোড়াপত্তন করেছিল এদেশকে শাপলা-শাহবাগে ভাগ করে। সে শাহবাগে খুন করেছে, শাপলায়ও খুন করেছে। মোটকথা আমাদের ভাইদের খুনে রঞ্জিত করেছে লড়াইয়ের জমিন শাপলা ও শাহবাগ। তখন খুন হওয়া দুই পক্ষ হাসিনার বিপক্ষে না দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েছিল একে অন্যের বিরুদ্ধে। এই বিভেদকে হাসিনা ও ভারত যতদিন জিয়িয়ে রেখেছিল, ততদিন তাঁদের সুদিন ছিল। যখনই আওয়ামী লীগ ও হাসিনার তৈরি দুই পক্ষ একত্রিত হয়ে গেলো, একে অন্যের পাশে এসে ভাই হয়ে বন্ধু হয়ে দাঁড়ালো, তখন দেশটা কেমন অনন্য হয়ে উঠলো। ইতিহাস সৃষ্টি হলো। হাসিনার পতন হলো, পতন হলো ভারতীয় আধিপত্যবাদের।”
তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই অভ্যুত্থানের ছয় মাস না পেরোতেই ভারত ও হাসিনার সেই পুরোনো বাইনারী আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। একদল আরেকদলকে ‘শাহবাগী’ বলছে, আরেকদল বলছে ‘জঙ্গি’। তিনি বলেন, “কি অব্যর্থ এক অস্ত্র তৈরি করেছে ভারত ও আওয়ামী লীগ। তাঁদের প্রাণ ভ্রমরাও এই অস্ত্রের মধ্যে লুকিয়ে আছে। যখনই জুলাইয়ের এই দুই শক্তি একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামলো, তখনই ভারত ও হাসিনার উত্থান শুরু হলো। দেশে অরাজকতা বাড়তে থাকলো।”
তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আওয়ামী লীগের ও ভারতের হয়ে একটি গোষ্ঠী এই বিরোধ জিয়িয়ে রাখতে, প্রকট করে তুলতে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা সফল হলে এদেশ ব্যর্থ হবে। এই অভ্যুত্থান, এত রক্ত বৃথা যাবে।”
ফারহানা মানিক মুনা চলমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে বলেন, “এটি জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষায় নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লড়াই। নারীর জন্য, শিশুর জন্য, বাবার জন্য, ভাইয়ের জন্য, একটা মানবিক সমাজ নির্মাণের লড়াই। এই আন্দোলন সরকারকে আরও গতিশীল করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা। এই আন্দোলন প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ও মানবিক করার প্রচেষ্টা। আওয়ামী লীগ সুযোগ নেওয়ার আগে আমরা চেয়েছি, আমাদের তৈরি সরকার যেন নিজেই সক্রিয় হয়, যেন জুলাইয়ের স্পিরিট ধ্বংস না হয়, যেন সরকার সচেতন হয়। অথচ আওয়ামী লীগ, ভারত আর এখানে চুপটি মেরে বসে থাকা একদল আওয়ামী দোসর ভাবছে, এটা বোধহয় আওয়ামী লীগকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার লড়াই। এটা হাস্যকর। এদেশের ছাত্র জনতা আপনাদের ফ্যাসিস্ট মতাদর্শকে খারিজ করেছে। এখন তারা নিজেদের মধ্যে একটা ঐক্য তৈরির প্রক্রিয়ার দিকে আগাচ্ছে।”
তিনি ছাত্র জনতাকে বিভক্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “চলমান আন্দোলনের আমরা যারা পক্ষের শক্তি, আমরা যারা জুলাইয়ের শক্তি, আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। কোনো ফাঁদ তৈরির সুযোগ দেওয়া যাবে না। ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। হোক সেই ফাঁদ ভারত, আওয়ামী লীগ কিংবা দেশীয় ভিন্ন কোনো শক্তির। সাবধান থাকতে হবে, কোনো উপায়েই যেন আমরা বিভক্ত না হয়ে যাই। ভারত এই বিভক্তিটুকুই চাইছে।”
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকারেরও উচিত নাগরিকদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করা। সরকার অস্থিরতা ও অপরিপক্কতার পরিচয় দিচ্ছে। তার সুযোগ নিচ্ছে সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় দোসররা। তারা ছাত্র জনতা থেকে সরকারকে বিচ্ছিন্ন করতে উঠেপড়ে লেগেছে।”
তিনি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “আমরা যেন ভুলে না যাই, হাজারো ভাই-বোনের জীবন বিলিয়ে দেওয়া সেই লড়াইকে, যে লড়াই আমাদেরকে এক নতুন সময়ের আশা দেখাচ্ছে। আমরা যেন ফের আমাদের সেই ঐক্যের শক্তিকে উপলব্ধি করতে ভুল না করি, যে ঐক্য ৫ আগস্টের বিজয় এনেছে। ৫ আগস্টের পর প্রশাসন ছাড়াই দেশ চালিয়েছে। আসুন, সতর্ক হই, ঐক্যবদ্ধ হই। তা না হলে এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের বিজয় চুরি হয়ে যাবে। আরও গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে প্রিয় মাতৃভূমি।”
এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, নারায়ণগঞ্জ ভিশন অনলাইন টিভি | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
© 2024, নারায়ণগঞ্জ ভিশন অনলাইন টিভি | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতএ
ই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, নারায়ণগঞ্জ ভিশন অনলাইন টিভি | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Leave a Reply